Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
Chandshi's historical doctor's house
Details

সে অনেকদিন আগের কথা। বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রামের নাম চাঁদশী। পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল এই অঞ্চল। এছাড়াও অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রথম নারী স্নাতক শ্রীমতি কাদম্বিনী বসুর জন্মভূমি এই চাঁদশী।

শিক্ষা দীক্ষা, দেশমাতৃকার জন্য সংগ্রাম, জমিদার কেদারনাথ বসু, অন্মিকা চরন গুহ এবং অন্যদা বসুর বসবাসসহ বহু প্রতিভাবান মানুষের বসবাসে তৎকালীন সময়ে চাঁদশী গ্রামটি হয়ে উঠেছিলো এক সু-বিশাল জনপদে। কিন্তু যেকথা না বললে কিছুই বলা হয়না-তা হলো ‘চাঁদশীর ক্ষত চিকিৎসালয়’। এক স্বপ্নাদেশপ্রাপ্ত মানুষের স্বপ্নপূরণ। নদীনালা ও ঝোপ জঙ্গলে ভর্তি বরিশালে ছিলো বিষধর সাপের উপদ্রব। চাঁদশীর মনসা বাড়ির আদি পুরুষ শ্রী বিষহরি দাস স্বপ্নে মা মনসার কৃপা লাভ করেন। কথিত রয়েছে-তিনি স্বপ্নে দেবীঘট এবং ওষুধের সন্ধান পান এবং তা শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্য, বিক্রয়ের জন্য নয়। তাহলে ওষুধ আর কাজ করবে না। তবে দান বা অনুগ্রহ গ্রহণ করা যাবে। এভাবেই চলতে থাকে দিন থেকে মাস, মাস থেকে বছরের পর বছর।

সূত্রমতে, কেশপ বংশীয় বৈদিক ব্রাহ্মণ পুরুষোত্তম ন্যায়লংকারের বংশধর শ্রী ভগবান ভট্টাচার্য্য কোলকাতায় পদার্পন করেন। কথিত রয়েছে, তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি চাঁদশী থেকে কোলকাতায় গিয়েছিলেন। এর আগে প্রথম ব্যাক্তি শ্রী কৃষ্ণদাস কোলকাতায় গিয়েছিলেন। ভগবান ভট্টাচার্য্য একাধারে তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধপুরুষ ও রাজ জ্যোতিষী ছিলেন। বর্ধমান ও দ্বারভাঙ্গার রাজপরিবারের সাথে তার ছিল নিত্য আনাগোনা। চাঁদশী ক্ষত চিকিৎসার প্রচার ও প্রসারে তার অবদান ছিলো অন্যতম।

শ্রী ভগবান ভট্টাচার্য্যর বংশধর বর্তমানে ভারতে বসবাসরত পল্লব ভট্টাচার্য্যর লেখা তাদের পারিবারিক ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৯০০ সালের দ্বারভাঙ্গার মহারাজার পালিত হাতির পায়ুদেশে ক্ষত রোগ দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসার পরেও হাতিটি সুস্থ্য না হওয়ায় মহাদুশ্চিন্তায় পরে মহারাজা। একপর্যায়ে তিনি খবর পাঠালেন ভগবান ভট্টাচার্য্যর কাছে। ওইসময় ডাক পরে চাঁদশীর মনসা বাড়ির উত্তরাধিকারী ডাক্তার পদ্মলোচন দাসের। তিনি (পদ্মলোচন) তস্য পুত্র মনমোহন দাসকে সাথে নিয়ে কোলকাতায় গিয়ে দ্বারভাঙ্গার মহারাজার পালিত হাতির পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে ওষুধ প্রয়োগ করেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, মহারাজার পালিত হাতির পায়ুদেশে ক্ষত রোগ নিরাময়ে ওইসময় ওষুধ তৈরীতে ব্যবহার করা হয় ৪০বছরের পুরোনো ঘি, ননী ও বিভিন্ন জড়ীবুটি। এসব ওষুধ ব্যবহারের পর রাজার হাতি ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে ওঠে। পরে মহারাজা চিকিৎসার প্রচার ও প্রসারের জন্য তৎকালীন সময়ে খুশি হয়ে ৫০ হাজার টাকা উপহার দিয়েছিলেন। এধরনের অসংখ্য দুরারোগ্য নিরাময়ের ঘটনা রয়েছে চাঁদশীর ক্ষত চিকিৎসালয়ের। কালক্রমে এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেলেও জরার্জীণ অবস্থায় আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে উপ-মহাদেশের ঐতিহাসিক চাঁদশীর ক্ষত চিকিৎসালয়ের ডাক্তার বাড়িটি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারুকার্য খচিত দ্বিতল ডাক্তার বাড়ির চারিপার্শ্ব এখন লতাপাতায় ঢেকে পরেছে। পুরোবাড়িটি জরার্জীন অবস্থায় এখন ধ্বংষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুরাকীর্তি হিসেবে ঐতিহাসিক ডাক্তার বাড়িটি সংরক্ষনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।

একইভাবে চাঁদশী গ্রামের তিন জমিদারের সকল ঐতিহাসিক নির্দশন আজ বেদখল হয়ে পরেছে। দখলকারীরা ক্রমেই নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে জমিদারদের পুরনো সব ঐতিহ্যকে। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে একই গ্রামের তিন জমিদারের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা শোনা গেলেও তাদের অসংখ্য স্মৃতি আজ বিলীন হয়ে গেছে। দখল হয়ে গেছে তাদের বসত বাড়ি, দালান-কোঠাসহ সহায় সম্পত্তি। চাঁদশী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ১৯৪৮ সালে দেশ বিভক্তির পর জমিদাররা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তারা আর ফিরে আসেননি। এ সুযোগে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী জাল কাগজপত্র তৈরি করে জমিদারদের সহায় সম্পত্তি দখল করে নেয়। তারা নিজেদের স্বার্থে জমিদার বাড়ির পূজা মন্ডপ, সমাধি মন্দির ও দালান কোঠা ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। একইসাথে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে জমিদার বাড়ির সকল ঐতিহাসিক নিদর্শন।